একটি ব্যবসার আইডিয়া নির্বাচনের পর এখন আপনার পরবর্তী ধাপ হলো বাজার বিশ্লেষণ করা এবং টার্গেট কাস্টমার শনাক্ত করা। আপনি কী বিক্রি করবেন তা ঠিক করলেও, সঠিক গ্রাহকের কাছে না পৌঁছালে ব্যবসা সফল হবে না। এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা, তাদের বয়স, অবস্থান, লাইফস্টাইল ও অনলাইন আচরণ, আপনার প্রতিযোগী কারা এবং কীভাবে গুগল ট্রেন্ডস, ফেসবুক ইনসাইট এবং Daraz ট্রেন্ডের মতো টুল ব্যবহার করে বাজার বিশ্লেষণ করবেন। এই আর্টিকেলটি শূন্য জ্ঞানের পাঠকদের জন্য লেখা হয়েছে, যাতে তারা বাজার বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেন এবং তাদের সম্ভাব্য সব প্রশ্নের উত্তর পান।

আপনি যাদের প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন, তারা কারা?
টার্গেট কাস্টমার হলেন সেই ব্যক্তিরা যারা আপনার পণ্য বা সেবা কিনবেন। তাদের চিনে না নিলে আপনার মার্কেটিং, পণ্যের দাম এবং প্রচারণা ভুল পথে যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টার্গেট কাস্টমার শনাক্ত করতে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:
- ডেমোগ্রাফিক তথ্য:
- বয়স: আপনার পণ্য কোন বয়সের মানুষের জন্য? উদাহরণস্বরূপ, ট্রেন্ডি মোবাইল কভার ১৮-৩০ বছরের তরুণদের জন্য, আর গৃহস্থালি পণ্য (যেমন, রান্নাঘরের সরঞ্জাম) ৩০-৫০ বছরের গৃহিণীদের জন্য উপযুক্ত।
- লিঙ্গ: পণ্যটি কি পুরুষ, মহিলা, নাকি উভয়ের জন্য? যেমন, মেয়েদের গহনা বা পুরুষদের ওয়ালেট।
- আয়ের স্তর: আপনার গ্রাহক কি মধ্যবিত্ত (মাসে ২০,০০০-৫০,০০০ টাকা আয়), নাকি উচ্চবিত্ত? মধ্যবিত্তরা সাশ্রয়ী পণ্য পছন্দ করেন, যেমন ৫০০ টাকার জুতা।
- শিক্ষা ও পেশা: ছাত্র, চাকরিজীবী, বা গৃহিণী? উদাহরণস্বরূপ, ছাত্ররা সস্তা গ্যাজেট কিনতে চায়, আর চাকরিজীবীরা প্রিমিয়াম পণ্যে বিনিয়োগ করতে পারেন।
- ভৌগোলিক অবস্থান:
- আপনার গ্রাহক কি ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো শহরে, নাকি গ্রামে? শহরের মানুষ অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত, কিন্তু গ্রামে ক্যাশ অন ডেলিভারি বেশি জনপ্রিয়।
- উদাহরণ: ঢাকায় ফ্যাশনেবল ব্যাগ বিক্রি চললেও, গ্রামে কৃষি সরঞ্জাম বা সাশ্রয়ী পোশাকের চাহিদা বেশি।
- কীভাবে শনাক্ত করবেন?
- প্রশ্ন করুন: আপনার পরিচিতদের জিজ্ঞাসা করুন, “এই পণ্যটি কি কিনতে চাইবে? কেন?” যেমন, মোবাইল কভার বিক্রি করতে চাইলে বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করুন তারা কী ধরনের কভার পছন্দ করেন।
- ফেসবুক গ্রুপ: “Entrepreneur Bangladesh” বা “Dhaka Buy & Sell” গ্রুপে পোস্ট করে জানুন কোন ধরনের পণ্যের চাহিদা আছে।
- স্থানীয় বাজার: বঙ্গবাজার বা নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখুন কোন ধরনের গ্রাহক কী কিনছেন।
সম্ভাব্য প্রশ্ন: আমি কীভাবে জানবো কোন গ্রাহক আমার পণ্য কিনবে?
উত্তর: ছোট পরিসরে পরীক্ষা করুন। যেমন, ফেসবুকে ৫০০ টাকার টি-শার্টের পোস্ট দিন এবং দেখুন কারা আগ্রহ দেখায়। তাদের বয়স, লিঙ্গ, এবং অবস্থান লিখে রাখুন।
বয়স, অবস্থান, লাইফস্টাইল ও অনলাইন ব্যবহার
টার্গেট কাস্টমারের বিস্তারিত প্রোফাইল তৈরি করতে তাদের লাইফস্টাইল এবং অনলাইন আচরণ বোঝা জরুরি। এটি আপনাকে সঠিক প্ল্যাটফর্মে মার্কেটিং করতে সাহায্য করবে।
- বয়স ও লাইফস্টাইল:
- তরুণ (১৮-২৫): ছাত্র বা নতুন চাকরিজীবী। তারা ফ্যাশন, গ্যাজেট (যেমন, ইয়ারবাড), বা সস্তা এক্সেসরিজ পছন্দ করেন। তাদের বাজেট কম, তাই ২০০-১,০০০ টাকার পণ্য বিক্রি করা সহজ।
- মধ্যবয়সী (২৫-৪০): চাকরিজীবী বা পরিবারের কর্তা। তারা গৃহস্থালি পণ্য, পোশাক, বা স্বাস্থ্যসম্পর্কিত পণ্য (যেমন, ফিটনেস ট্র্যাকার) কিনতে আগ্রহী।
- বয়স্ক (৪০+): তারা আরামদায়ক পণ্য (যেমন, জুতা, ওষুধের বাক্স) বা স্বাস্থ্যসেবা পছন্দ করেন।
- অবস্থান:
- শহর: ঢাকা, চট্টগ্রাম, বা সিলেটের মানুষ অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত। তারা দ্রুত ডেলিভারি চান।
- গ্রাম: গ্রামের মানুষ ক্যাশ অন ডেলিভারি পছন্দ করেন এবং সাশ্রয়ী পণ্য কিনতে চান। তাদের কাছে পৌঁছাতে স্থানীয় কুরিয়ার বা ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করুন।
- উদাহরণ: ঢাকায় মোবাইল কভার বিক্রি করতে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করুন, আর গ্রামে স্থানীয় ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিন।
- অনলাইন ব্যবহার:
- কোন প্ল্যাটফর্ম? তরুণরা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এবং TikTok ব্যবহার করে। মধ্যবয়সীরা ফেসবুক এবং WhatsApp পছন্দ করেন।
- কেনাকাটার অভ্যাস: তরুণরা ইমপালস ক্রয় করেন (দেখে কিনে ফেলেন), আর মধ্যবয়সীরা রিভিউ পড়ে কিনেন।
- কীভাবে বুঝবেন? ফেসবুক পেজে পোস্ট করে দেখুন কারা লাইক, কমেন্ট, বা শেয়ার করে। যেমন, একটি টি-শার্টের পোস্টে ২০-২৫ বছরের তরুণরা কমেন্ট করলে তারাই আপনার টার্গেট।
কীভাবে প্রোফাইল তৈরি করবেন?
- একটি কাগজে লিখুন: “আমার টার্গেট কাস্টমার হলো ২০-৩০ বছরের তরুণ, ঢাকায় থাকে, ছাত্র বা চাকরিজীবী, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সক্রিয়, ৫০০-২,০০০ টাকার পণ্য কিনতে পারে।”
- এই প্রোফাইল মাথায় রেখে মার্কেটিং প্ল্যান করুন।
সম্ভাব্য প্রশ্ন: আমার পণ্য সবাই কিনতে পারে, তাহলে কেন শুধু একটি গ্রুপ টার্গেট করব?
উত্তর: সবাইকে টার্গেট করলে মার্কেটিং খরচ বাড়বে এবং বার্তা অস্পষ্ট হবে। একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ (যেমন, তরুণরা) টার্গেট করে শুরু করুন, পরে বাজার বাড়ান।

প্রতিযোগী কে কে? তারা কীভাবে চলছে?
প্রতিযোগী বিশ্লেষণ আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে আপনার বাজারে কারা কাজ করছে, তারা কীভাবে সফল হচ্ছে এবং আপনি কীভাবে তাদের থেকে আলাদা হবেন।
- প্রতিযোগী কারা?
- সরাসরি প্রতিযোগী: একই পণ্য বিক্রি করে। যেমন, আপনি মোবাইল কভার বিক্রি করলে Daraz বা স্থানীয় ফেসবুক পেজ যারা একই পণ্য বিক্রি করে।
- পরোক্ষ প্রতিযোগী: অন্য ধরনের পণ্য বিক্রি করে কিন্তু একই গ্রাহক টার্গেট করে। যেমন, মোবাইল কভারের পরিবর্তে মোবাইল হোল্ডার বিক্রি করে।
- কীভাবে খুঁজবেন? ফেসবুকে আপনার পণ্যের নাম সার্চ করুন (যেমন, “মোবাইল কভার বাংলাদেশ”), Daraz-এ একই পণ্য দেখুন, বা স্থানীয় বাজারে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন।
- তারা কীভাবে চলছে?
- পণ্যের দাম: তাদের দাম কত? যেমন, Daraz-এ একটি মোবাইল কভার ৩০০ টাকা হলে আপনি ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারেন।
- মার্কেটিং কৌশল: তারা কি ফেসবুক অ্যাড, ইনস্টাগ্রাম রিলস, বা ইনফ্লুয়েন্সার ব্যবহার করে? তাদের পোস্টের কমেন্ট পড়ুন, গ্রাহক কী বলছে দেখুন।
- গ্রাহক সেবা: তারা কি দ্রুত ডেলিভারি দেয়? রিভিউতে গ্রাহক কি অভিযোগ করছে?
- অনন্য বৈশিষ্ট্য: তারা কি ফ্রি শিপিং, গিফট, বা কাস্টমাইজেশন অফার করে?
- কীভাবে আলাদা হবেন?
- দামে প্রতিযোগিতা: প্রতিযোগীর চেয়ে ১০-২০% কম দামে বিক্রি করুন। যেমন, তাদের ৩০০ টাকার পণ্য আপনি ২৫০ টাকায় দিন।
- বাড়তি সুবিধা: ফ্রি গিফট, দ্রুত ডেলিভারি, বা কাস্টমার সাপোর্ট দিন।
- অনন্য ব্র্যান্ডিং: আপনার পণ্যের গল্প তৈরি করুন। যেমন, “আমাদের টি-শার্ট স্থানীয় কারিগরদের তৈরি।”
- উদাহরণ: যদি প্রতিযোগী শুধু মোবাইল কভার বিক্রি করে, আপনি কভারের সঙ্গে ফ্রি স্ক্রিন প্রটেক্টর দিন।
কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
প্রতিযোগী বিশ্লেষণ করা আপনার ব্যবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ এটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে আপনার বাজারে কারা কাজ করছে, তাদের শক্তি ও দুর্বলতা কী, এবং আপনি কীভাবে তাদের থেকে আলাদা হতে পারেন। এই বিশ্লেষণের জন্য একটি সুন্দর ও সাজানো-গোছানো টেবিল তৈরি করা খুবই কার্যকর, কারণ এটি তথ্যগুলো এক নজরে তুলনা করতে সাহায্য করে। নিচে “কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন” এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং একটি সুন্দরভাবে সাজানো টেবিল দেওয়া হলো।
প্রতিযোগী বিশ্লেষণের জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন। এই পদ্ধতি আপনাকে আপনার প্রতিযোগীদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেবে এবং আপনার ব্যবসার কৌশল ঠিক করতে সাহায্য করবে:
- প্রতিযোগীদের তালিকা তৈরি করুন:
- আপনার পণ্য বা সেবার মতো একই ধরনের পণ্য বিক্রি করে এমন ব্যবসাগুলো খুঁজে বের করুন। এরা হতে পারে স্থানীয় ফেসবুক পেজ, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম (যেমন, Daraz), বা স্থানীয় দোকান।
- উদাহরণ: যদি আপনি মোবাইল কভার বিক্রি করেন, তাহলে ফেসবুকে “মোবাইল কভার বাংলাদেশ” সার্চ করে ২-৩টি পেজ এবং Daraz-এর বিক্রেতাদের তালিকাভুক্ত করুন।
- তথ্য সংগ্রহ করুন:
- প্রতিযোগীদের পণ্য, দাম, মার্কেটিং কৌশল, গ্রাহক সেবা এবং দুর্বলতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন। এই তথ্য পেতে:
- তাদের ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
- পণ্যের দাম, শিপিং খরচ, এবং অফার চেক করুন।
- গ্রাহকদের রিভিউ ও কমেন্ট পড়ুন।
- তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দেখুন, কীভাবে তারা প্রচার করে বুঝুন।
- উদাহরণ: একটি প্রতিযোগী যদি ৩০০ টাকায় মোবাইল কভার বিক্রি করে কিন্তু ডেলিভারি দেরি হয়, তাহলে এটি তাদের দুর্বলতা।
- টেবিলে তথ্য সাজান:
- একটি টেবিল তৈরি করে প্রতিযোগীদের তথ্য সুন্দরভাবে সাজান। এই টেবিলে পণ্য, দাম, মার্কেটিং কৌশল, গ্রাহক সেবা এবং দুর্বলতা অন্তর্ভুক্ত করুন।
- টেবিলটি আপনাকে এক নজরে তুলনা করতে এবং আপনার কৌশল নির্ধারণে সাহায্য করবে।
- আপনার কৌশল ঠিক করুন:
- প্রতিযোগীদের দুর্বলতার সুযোগ নিন। যেমন, যদি তাদের ডেলিভারি ধীরগতির হয়, আপনি দ্রুত ডেলিভারি দিন।
- তাদের শক্তি থেকে শিখুন। যেমন, যদি তারা ফেসবুক অ্যাড দিয়ে ভালো ফল পায়, আপনিও ছোট বাজেটে অ্যাড চালান।
- আলাদা হওয়ার উপায় খুঁজুন। যেমন, প্রতিযোগী যদি শুধু মোবাইল কভার বিক্রি করে, আপনি ফ্রি স্ক্রিন প্রটেক্টর বা কাস্টমাইজড ডিজাইন অফার করুন।
- নিয়মিত আপডেট করুন:
- বাজার পরিবর্তনশীল। প্রতি ২-৩ মাসে প্রতিযোগীদের তথ্য আপডেট করুন এবং আপনার কৌশল পরিবর্তন করুন।
- উদাহরণ: যদি প্রতিযোগী নতুন করে ফ্রি শিপিং অফার করে, তাহলে আপনি ফ্রি গিফট বা ছাড় দিতে পারেন।
প্রতিযোগী বিশ্লেষণ টেবিল
নিচে একটি সুন্দরভাবে সাজানো এবং গোছানো টেবিল দেওয়া হলো, যা মোবাইল কভার বিক্রির একটি কাল্পনিক উদাহরণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। আপনি আপনার পণ্যের জন্য একইভাবে টেবিল তৈরি করতে পারেন।
প্রতিযোগী | পণ্য | দাম | মার্কেটিং কৌশল | গ্রাহক সেবা | দুর্বলতা |
---|---|---|---|---|---|
দোকান A (ফেসবুক পেজ) | মোবাইল কভার | ৩০০ টাকা | ফেসবুক পোস্ট, ছোট বাজেটের অ্যাড | ৩-৫ দিনে ডেলিভারি, মাঝারি সাপোর্ট | কম রিভিউ, ডেলিভারি দেরি |
দোকান B (Daraz) | মোবাইল কভার | ৩৫০ টাকা | Daraz প্রচার, ইনস্টাগ্রাম রিলস | দ্রুত ডেলিভারি, ভালো রিটার্ন পলিসি | দাম বেশি, কাস্টমাইজেশন নেই |
দোকান C (ইনস্টাগ্রাম) | মোবাইল কভার + হোল্ডার | ৫০০ টাকা | ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, আকর্ষণীয় ছবি | দ্রুত রিপ্লাই, ২ দিনে ডেলিভারি | সীমিত ডিজাইন, শিপিং খরচ বেশি |
টেবিল ব্যবহারের নির্দেশনা
- তথ্য পূরণ করুন:
- আপনার পণ্যের প্রতিযোগীদের তালিকা তৈরি করে টেবিলে তথ্য যোগ করুন।
- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, Daraz, বা স্থানীয় বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
- উদাহরণ: যদি আপনি টি-শার্ট বিক্রি করেন, তাহলে ফেসবুকে “টি-শার্ট বাংলাদেশ” সার্চ করে ২-৩টি পেজের তথ্য লিখুন।
- তুলনা করুন:
- টেবিলের তথ্য দেখে বুঝুন কোন প্রতিযোগীর দাম বেশি, কার গ্রাহক সেবা দুর্বল, বা কার মার্কেটিং শক্তিশালী।
- উদাহরণ: যদি দোকান A-এর ডেলিভারি দেরি হয়, আপনি ২ দিনে ডেলিভারি দিয়ে গ্রাহক আকর্ষণ করতে পারেন।
- কৌশল তৈরি করুন:
- প্রতিযোগীদের দুর্বলতার সুযোগ নিন। যেমন, যদি তাদের দাম বেশি হয়, আপনি কম দামে বিক্রি করুন।
- তাদের শক্তি অনুকরণ করুন। যেমন, যদি তারা ইনস্টাগ্রাম রিলস ব্যবহার করে, আপনিও ছোট ভিডিও বানান।
- আলাদা হওয়ার উপায় খুঁজুন। যেমন, প্রতিযোগী যদি শুধু কালো কভার বিক্রি করে, আপনি রঙিন বা কাস্টমাইজড কভার অফার করুন।
- টেবিল আপডেট করুন:
- প্রতি ২-৩ মাসে প্রতিযোগীদের নতুন তথ্য যোগ করুন। যেমন, তারা নতুন পণ্য বা অফার চালু করলে টেবিলে লিখুন।
টেবিলের সুবিধা
- স্পষ্ট তুলনা: এক নজরে প্রতিযোগীদের শক্তি ও দুর্বলতা দেখা যায়।
- কৌশল নির্ধারণ: কোন বিষয়ে ফোকাস করবেন (যেমন, কম দাম বা দ্রুত ডেলিভারি) তা ঠিক করা সহজ হয়।
- সময় বাঁচায়: সব তথ্য এক জায়গায় থাকলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
সম্ভাব্য প্রশ্ন: আমি কীভাবে প্রতিযোগীদের তথ্য পাবো?
উত্তর: তাদের ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল, বা Daraz স্টোর ভিজিট করুন। পণ্যের দাম, রিভিউ, এবং পোস্ট দেখুন। স্থানীয় বাজারে গিয়ে দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলুন।

গুগল ট্রেন্ডস, ফেসবুক ইনসাইট, Daraz ট্রেন্ড ব্যবহার করে বিশ্লেষণ
ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে বাজার বিশ্লেষণ করা সহজ এবং বিনামূল্যে। এখানে তিনটি টুলের ব্যবহার ব্যাখ্যা করা হলো:
- গুগল ট্রেন্ডস (trends.google.com):
- কী? এটি দেখায় কোন পণ্য বা বিষয়ে মানুষ কতটা সার্চ করছে।
- কীভাবে ব্যবহার করবেন?
- গুগল ট্রেন্ডসে গিয়ে আপনার পণ্যের নাম লিখুন (যেমন, “মোবাইল কভার”)।
- “Bangladesh” সিলেক্ট করুন এবং সময়সীমা হিসেবে “Past 12 months” বেছে নিন।
- দেখুন সার্চ কি বাড়ছে নাকি কমছে। যেমন, যদি “ইয়ারবাড” সার্চ বাড়ে, তাহলে এটি বিক্রির ভালো সময়।
- “Related Queries” দেখুন, এটি অন্যান্য জনপ্রিয় পণ্যের আইডিয়া দেবে।
- উদাহরণ: যদি গুগল ট্রেন্ডসে দেখেন “ওয়্যারলেস ইয়ারবাড” সার্চ ঈদের আগে বাড়ে, তাহলে ঈদের আগে এই পণ্য বিক্রি করুন।
- ফেসবুক ইনসাইট:
- কী? ফেসবুক পেজের ইনসাইট আপনাকে বলে কারা আপনার পোস্ট দেখছে এবং তারা কেমন।
- কীভাবে ব্যবহার করবেন?
- একটি ফেসবুক পেজ খুলুন এবং কিছু পণ্যের পোস্ট দিন।
- পেজের “Insights” সেকশনে যান। এখানে দেখাবে কোন বয়সের, কোন লিঙ্গের, এবং কোন শহরের মানুষ আপনার পোস্টে আগ্রহী।
- উদাহরণ: যদি দেখেন ২০-২৫ বছরের মেয়েরা আপনার গহনার পোস্টে লাইক দিচ্ছে, তাহলে তাদের টার্গেট করুন
- টিপস: পোস্টে প্রশ্ন করুন, যেমন, “কোন রঙের কানের দুল পছন্দ করেন?” এটি গ্রাহকের পছন্দ বুঝতে সাহায্য করবে।
- Daraz ট্রেন্ড:
- কী? Daraz-এর “Top Searches” বা “Best Sellers” বিভাগ জনপ্রিয় পণ্য দেখায়।
- কীভাবে ব্যবহার করবেন?
- Daraz-এ গিয়ে আপ fores পণ্যের ক্যাটাগরি সার্চ করুন (যেমন, “Electronics” বা “Fashion”)।
- দেখুন কোন পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে এবং তাদের রিভিউ পড়ুন। যেমন, যদি দেখেন “ওয়্যারলেস মাউস” বেশি বিক্রি হয়, তাহলে এটি বিক্রি করার কথা ভাবুন।
- রিভিউতে গ্রাহক কী অভিযোগ করছে দেখুন। যেমন, যদি তারা বলে “ডেলিভারি দেরি হয়”, তাহলে আপনি দ্রুত ডেলিভারি দিয়ে আলাদা হন।
- উদাহরণ: Daraz-এ “মোবাইল কভার” সার্চ করে দেখুন কোন ডিজাইন বেশি জনপ্রিয়। সেই ডিজাইন স্থানীয়ভাবে সোর্স করুন।
কীভাবে শুরু করবেন?
- গুগল ট্রেন্ডসে ৩টি পণ্য সার্চ করুন এবং তাদের জনপ্রিয়তা তুলনা করুন।
- ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে ইনসাইট চেক করুন।
- Daraz-এ আপনার পণ্যের ক্যাটাগরি ব্রাউজ করুন এবং ৫টি জনপ্রিয় পণ্যের তালিকা তৈরি করুন।
সম্ভাব্য প্রশ্ন: আমি টুল ব্যবহারে অভ্যস্ত নই, তাহলে কী করব?
উত্তর: শুরুতে ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া দেখুন। ইউটিউবে “Google Trends tutorial” দেখে ধীরে ধীরে শিখুন। স্থানীয় বাজারে গিয়েও তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
বাজার বিশ্লেষণ এবং টার্গেট কাস্টমার শনাক্ত করা আপনার ব্যবসার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। আপনার গ্রাহকের বয়স, অবস্থান, লাইফস্টাইল এবং অনলাইন আচরণ বুঝে তাদের কাছে পৌঁছান। প্রতিযোগীদের বিশ্লেষণ করে তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিন এবং গুগল ট্রেন্ডস, ফেসবুক ইনসাইট, এবং Daraz-এর মতো টুল ব্যবহার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। পরবর্তী পর্বে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে আপনার ব্র্যান্ড তৈরি করবেন এবং নামকরণের মাধ্যমে গ্রাহকের মনে জায়গা করে নেবেন।
অতিরিক্ত টিপস শূন্য থেকে শুরু করার জন্য:
- একটি ফেসবুক পেজ খুলে আপনার পণ্যের পোস্ট দিন এবং ইনসাইট চেক করুন।
- ইউটিউবে “How to use Google Trends” বা “Market research for beginners” সার্চ করুন।
- স্থানীয় দোকানে গিয়ে দোকানদারদের জিজ্ঞাসা করুন কোন পণ্য বেশি চলে।
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট বাজার গবেষণায় সময় দিন।